মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক : মহান বিজয় দিবসের আর মাত্র দুইদিন বাকি। এই দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সরকারিভাবে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি পর্যায় এমনিক বিভিন্ন সরকারি-আধা সরকারি অফিসে এই নানাভাবে পতাকা উত্তোলন চোখে পড়ে। কোন দিবসে কিভাবে এই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হয় সেটা আমরা ভুলে যাই।
একটি দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্বের প্রতীক হচ্ছে তার পতাকা। আর এ পতাকা একটি দেশ তথা রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে। তেমনি আমাদের দেশের পরাধীনতার আবরণ থেকে বের হয়ে স্বাধীনতার সোনালি অক্ষরে নাম লিখানোর একটি অর্জন হচ্ছে এ সবুজের বুকে লাল পতাকা। তবে এ পতাকাকে উত্তোলন কিংবা এর সঠিকভাবে সঠিক মাপে তৈরি করাও প্রয়োজন। যেই পতাকাকে তার নিজ অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে লাখো শহীদ নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল তার মান অক্ষুন্ন রাখতে চলুন জেনে নেই সেই পতাকার সঠিক মাপ এবং এর নিয়মাবলী।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে একটা ভরাট রক্তিম বৃত্ত নিয়ে এটা তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যরে ৫ ভাগের একভাগ। জাতীয় পতাকার লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক। উজ্জ্বল ঘন সবুজ তারুণ্যের উদ্দীপনা ও বিস্তৃত গ্রাম বাংলার প্রতীক।
পতাকা টানানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে এটি এমন জায়গায় টানানো না হয় যাতে এর মান অক্ষুণ্ণ হয়। পতাকা দিয়ে মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পেছনের অংশ কোনো অবস্থাতেই ঢেকে দেয়া যাবে না। যেসব ক্ষেত্রে কেবলমাত্র দুটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হবে।
‘বাংলাদেশের পতাকা’র উপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না। যে ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের সহিত ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় সবশেষে নামাতে হবে। যে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে এবং অতঃপর নামিয়ে অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হবে। ওই দিবসে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে, অতঃপর নামাতে হবে।
‘পতাকা’ কোনো ব্যক্তি বা জড় বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না। ‘পতাকা’ কখনই তার নিচের কোনো বস্তু যেমন- পানি বা কোনো পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করবে না। ‘পতাকা’ কখনই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাবে না, সর্বদাই ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকবে। পতাকাকে কখনও পদদলিত করা যাবে না। কোনো কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করার জন্য ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাবে না।
‘পতাকা’ দ্রুত উত্তোলন করতে হবে এবং সসম্মানের সঙ্গে নামাতে হবে। পতাকার অবস্থা যদি এমন হয় যে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না, নষ্ট হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে, বিশেষ করে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে। বিভিন্ন দিবস যেমন,বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন করতে হবে বাঁশের বা স্টিকের একদম উপরে। আর শোক দিবসে টাঙ্গাতে হবে অর্ধনমিত করে।
পতাকা একটি দেশের গৌরবের অংশ। তাই এই পতাকাকে উচিত সঠিক নিয়ম এবং সম্মানের সঙ্গে তার ব্যবহার করা এবং অন্যদের সেই সম্পর্কে ধারণা দেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।